হারিয়ে খুজবে।




 -'আদিত্য কাল একটু সময় হবে তোমার? কয়দিন ধরে ভীষণ মাথা-ব্যথা, একটু ডাক্তারের কাছে যেতাম।'


আদিত্য কাজের মাঝে লেপটপ থেকে চোখ না ফিরিয়েই বলে উঠল,

-'আমার সময় নেই। কাল ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে।'


-'আপনি একটু সময় করে ছুটি নিন না। অনেকদিন কোথাও একসাথে ঘোরা হয় না, আর ডাক্তারের কাছেও যাব।'


-'আশ্চর্য! এইদিনই তো ঘুরে আসলাম। আর তুমি হাজার জোরাজোরি করলেও আমি সময় দিতে পারব না, এইবার অনেক টাকার ডিল এটা । আর তোমার হয়তো মাইগ্রেনের সমস্যা, তুমি ডাক্তারের কাছে চলে যেও গাড়ি নিয়ে।'


মোহনা আর কিছু না বলে অশ্রুসিক্ত নয়নে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এখন রাত দুইটা-তিনটা পর্যন্ত এভাবেই কাজ করে যাবে আদিত্য আর সকালে উঠেই অফিসে চলে যাবে। মোহনাকে একটু ভালোমতো সময়ও দেয় না।


আদিত্যর সাথে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। আদিত্য ভাবে 'টাকাই সব সুখের মূল'। কিন্তু আসলেই কী তা সঠিক? একটা মানুষকে সময় দেওয়ার থেকে বড়ো সুখ আর নেই। সারাদিন মোহনা এই বাসায় একা একা পড়ে থাকে। রাতে আদিত্য আসলেও একটু কাছে টেনে সময়ই দেয় না। তার ভাবনাতেও আসে না যে একটা মানুষ তারই অপেক্ষায় সারাদিন একা একা কাটিয়ে দেয়। এই না যে আদিত্য মোহনাকে ইগনোর করে, সেও ভালোবাসে মোহনাকে কিন্তু ওইযে টাকাই সব ভাবে সে। কয়েকদিন ধরে মোহনার হঠাৎ হঠাৎ ভীষণ মাথা-ব্যথা উঠে। তাই আজকে ভাবল আদিত্যকে একটু বলে একসাথে ডাক্তারের কাছে যাবে কিন্ত তা তো হলো না। মোহনা এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।


আদিত্যর কাজ শেষ হতে হতে অনেক রাত গড়ালো। সে মোহনার দিকে এক ফলক তাকিয়ে কাঁথা টেনে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো।


সকালে উঠে পাশে আদিত্যকে দেখল না মোহনা। বোধহয় অফিসে চলে গিয়েছে। মোহনার আজ উঠতে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছে। 'ইসস! মানুষটা তার জন্য না খেয়ে অফিসে চলে গেল' মোহনা আপনমনে বিড়বিড় করে ফ্রেশ হয়ে এলো। তারও আর কিছু খেতে ইচ্ছে করেনি তাই রেডি হয়ে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।


---------


-'ডাক্তারে কী বলল মোহ?' প্রতিদিনের ন্যয় রাতে লেপটপে কাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করল আদিত্য।


মোহনা একফলক মানুষটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, 'ও কিছু না। মাইগ্রেনের সমস্যা।'


আদিত্য আর কোনো জবাব না দিয়ে কাজ করতে লাগলো আর মোহনা কাঁদো কাঁদো চোখে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে রইল।

.

দিন যতই যায় মোহনার মাথাব্যথা ততই বাড়তে থাকে।

.

প্রতিদিনের ন্যয় আজও আদিত্য মোহনার আগে ঘুম থেকে উঠলো। আদিত্য উঠে মোহনার দিকে এক ফলক তাকিয়ে ফ্রেশ হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল।

.

কাজের মাঝে হঠাৎ কারো কল বাজতেই আদিত্য বিরক্তবোধ হলো। ভাবলো মোহনা কল করেছে। প্রতিদিন এই মেয়েটা তিন-চারবারের উপর কল করে করে কাজে ডিসটার্ব করে। আদিত্য বিড়বিড় করে মোবাইলের দিকে না তাকিয়ে কেটে দিল। পরপর কয়েকবার বাজতেই আদিত্য কল ধরেই রাগী গলায় বলে উঠলো,

-'উফ মোহ, তোমায় কয়বার বলবো! আমি কাজের সময় কল না দিতে!'


-'দ্রুত বাসায় এসো আদিত্য।' ওইপাশ থেকে মায়ের ভারী কণ্ঠ শুনতেই আদিত্য বলে উঠল।


-'মা, গ্রামের বাড়ি থেকে তুমি কখন এলে? আর তোমার কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন মা?'


-'তুমি আসো।'


আদিত্য আর কিছু না ভেবে দ্রুত অফিস থেকে বেরিয়ে এলো। বাসার সামনে আসতেই দেখল অনেক ভিড়। এত ভিড় কীসের আদিত্য বুঝতে পারলো না। সকালেই তো সব ঠিকঠাক ছিল। আদিত্য দ্রুত ভিড় ঠেলে ঢুকতেই দেখল, সাদা কাপড়ে ঢাকা তারই প্রিয়তমা প্রেয়সী শুয়ে আছে।


আদিত্য স্তব্ধ। সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মোহনার পাশে মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লো। পাশেই অদূরে তার মা মুখে আঁচল ঢেকে কাঁদছে। আদিত্যর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার মোহ আর নেই। সে এক দৃষ্টিতে মোহনার দিকে তাকিয়ে রইল। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না মোহনা আর ফিরবে না তার কাছে। আর কোনো আবদার ধরবে না।


মোহনার খাটিয়া তুলতেই আদিত্য মায়ের উদ্দেশ্যে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বাচ্চার মত করে বলে উঠলো ,'মা আমার মোহকে কই নিয়ে যাচ্ছে? বলো না, ও একা থাকতে পারবে না। ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না মা।'


'সে আর ফিরবে না বাবা।'

.

.

কেটে গেল তিনদিন। এখন আর কেউ এসে বায়না ধরে না। অফিসেও আর যায় না, অনীহা এসে গিয়েছে সবকিছুর প্রতি। এখন আদিত্য বুঝতে পারে টাকাই সব নয়। টাকার পিছনে দৌড়তে গিয়ে আসল মানুষটাকেই হারিয়ে ফেলল। এমন অনেক মানুষই আছে যে টাকার খোঁজ করতে গিয়ে পরিবারকেই আর সময় দেই না। এমন কারোই না হোক। টাকাই কিন্তু সব নয়। 


#সমাপ্ত

#অনুগল্প 

#হারিয়ে_খুজবে

#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম) 

Post a Comment

Previous Post Next Post